১২. আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো, কবে শেষ কোনো খোলা মাঠের মধ্যে একা গিয়ে দাঁড়িয়েছেন? অনুভব করেছেন পৃথিবীর এই বিশালত্ব। করেন নি তো! খুরিতে আসুন। স্যাম ডিউনে বড় ভীড়। ধূ ধূ মরূর বুকে একা দাঁড়ান দুহাত বিস্তৃত করে। হু হু করে সমস্ত সুস্মৃতি ফিরে আসছে আপনার দুহাত বেয়ে, হৃদয়ে। জীবন বড় সুন্দর। সূর্যাস্তকাল আপনাকে রাঙিয়ে যাবে চিরনতুন করে। বিশালতার মাঝে আপনাকে চেনা — কোথায় পাবেন এমন উপহার!! রাজস্থান ছাড়া।
১৩. তেরো নাকি অশুভ। আমার চোখেতো সকলই শোভন। বিশেষ করে যদি তা বৃষ্টি আনে। যখন তখন বৃষ্টি। ইচ্ছে বৃষ্টি। আছে। আছে উদয়পুরে। সহেলিঁয় কি বাড়ি তে। বাঙালির আর কি বেশি কিছু চাই? গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত আর বসন্তের বৃষ্টি এক লহমায় পাবেন।
১৪. ইঁদুরকে ও যে ভালোবাসা যায়, ইঁদুর ও যে দৈবী শক্তি পেতে পারে জানেন কি? ছিঃ! তাই আবার হয় না কি? হয়। আপনারো ভালো লাগবে। ইঁদুর দেখতে। করণিমাতা মন্দির। বিষ আনতে ভুলেই যাবেন। প্রসাদ চাইবেন। অসম্ভব ও সম্ভব হয়, রাজস্থানে।
১৫. ‘সোনার কেল্লা’ আপামর বাঙলির বাল্যপ্রেম। রামদেওড়া ষ্টেশন। পাগড়ি মাথায় মন্দার বোস। আছে, আছে…টেলিপ্যাথির জোর আছে। দেখা পাবেন। শুধু একবার রামদেব বাবার মন্দিরে মাথা ঠুকে( এ রামদেব পতঞ্জলির নয়) চলে আসুন রামদেওড়া ইষ্টিশনে।এই রস কেবল বাঙালিভোগ্য।
১৬. তারাগড় পাহাড়ের পাদদেশে আজমীঢ় শরিফ। গলিগুলো বড্ড চেনা।ভেতরে সম্রাট আকবরের তৈরী বৃহৎ উনুন,হায়দরাবাদের নিজামের তৈরি গেট দেখে, চাদর চড়িয়ে বাইরে এসে যখন দাঁড়াবেন, ঠান্ডা হাওয়া এক ঝলকে আপনার চোখে মুখে বুলিয়ে যাবে শান্তির প্রলেপ, খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় আপনার প্রাপ্য আশীর্বাদ।
১৭.সারা ভারতের মধ্যে একমাত্র ব্রহ্মামন্দির আছে রাজস্থানের পুষ্করে। অনেকেই তা জানেন। তবে জানেন কি দেবী সাবিত্রী কেন ব্রহ্মা মন্দির থেকে দূরে, রত্নগিরি পর্বতের ওপরে চলে গিয়েছিলেন সাধনা করতে? আর তাঁরই আর এক রূপ কালিঘাটে অবস্থিত? পুরাণের এই গল্প জানতে তো পুষ্কর আসতেই হবে। উপরি পাওনা হবে ঘন সবুজ পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে রোপ ওয়ে চড়ার দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি।
১৮. বিদেশের চওড়া ও সুপ্রশস্ত রাস্তার কথা তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। রাজস্থানে মনে হল তেমনটাই দেখলাম। জয়পুর থেকে বিকানের, বিকানের থেকে জয়শলমীর, সেখান থেকে যোধপুর সবই মোটামুটি ৩৩০ কিমি থেকে ৩৬০ কিমি। এই দূরত্ব একটা টেম্পো ট্রাভেলর আপনাকে পার করে দেবে ৫ -৬ ঘন্টায়( চা আর লঙ্কা বড়া খাবার সময় ধরে)। তার সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই। ফেসবুকে log in করার সময়ই পাবেন না। জুকারবার্গের দিব্যি।
১৯. আমরা তো পুরোনো বলে কত কিছুই বাতিল করি। ঠাকুরদার পকেটঘড়ি, দিদিমার রূপোর পানের বাটা, বড় ঠাকুমার পোকা ধরে যাওয়া সাদা-কালো ছবি। তার জন্য আফশোস হবে রাজস্থানে এলে। নাই বা হলাম রাজা বা রাণী, নাই বা থাকলো রাজপ্রাসাদের মিউজিয়াম, আমাদের প্রত্যেকের বংশের ঐতিহ্য আমাদের কাছে দামি। অতীতকে কত যত্ন করে মাথায় তুলে রাখা যায় তা আমাকে শেখালো রাজস্থান।
২০. ওঁশিয়া, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও জৈন্য ধর্মের মন্দিররাজি। পাথরের ওপর মন পাগল করা কারুকার্য। এর মর্ম বাঙালি ছাড়া আর কে বুঝবে? শুধু ওঁশিয়া নিয়েই একটা গোটা বই লেখা যেতে পারে।আর আছে শ্বেত পাথরের সূক্ষ্ম কারুকার্য মন্ডিত মন্দির রাজস্থানের আত্মা দিলওয়াড়া মন্দির, এখানে ছবি তোলা মানা। মনের আয়নায় ছেপে আনুন। চিরজীবনের পাথেয়।
২১. রাজস্থানি লোকসঙ্গীত রাজস্থানের এক অমূল্য সম্পদ। মাঢ় রাগে রচিত ‘ কেশরিয়া বালম্, পাধারো মারে দেশ ‘ রাজস্থানের অলিতে গলিতে আপনাকে স্বাগত জানাবে, সঙ্গে বাজবে রাবণহাতা নয়তো কামিচা নয়তো অন্য কোনো স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র। এ যেন বহু জন্ম আগের ডাক। শুনতে পাচ্ছেন?
রাজস্থানে বাঙালি আসতে পারে আরো ৫০০ টি কারণে। ফিরেও আসতে পারে বারোটা কারণে। ৩ নং কারণ শীতের নলেনগুড়ের বহড়ুর মোয়া আর ৭ নং কারণ পোস্ত। কিন্তু যেতে একবার হবেই। যাবার পর এটা ভেবেই ফিরে আসার জন্য মনকে শক্ত করবেন– ” নাহ্, পরের বার আরো বেশি সময় নিয়ে আসবো।”
Quality documentary
LikeLike
Just awesome
LikeLike